Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Departmental Annual Report-21-22

                                                                                                                                         

                                                                বার্ষিক প্রতিবেদন ২২-২৩

                                                                      রংপুর বিভাগ


রংপুর বিভাগ উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম কৃষি প্রধান এলাকা। রংপুর,দিনাজপুর,গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও,নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার সমন্বয়ে এ বিভাগ গঠিত। কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের টেকসই বিপণন ব্যবস্থার উপর এ বিভাগের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। উৎপাদিত ফসলের যথাযথ সংরক্ষণ, ব্যবহার ও সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এ বিভাগের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। রংপুর বিভাগের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিভাগের আওতাধীন জেলাসমূহে হাট বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন,গুদামে শস্য সংরক্ষণ ও ঋণ প্রদান,প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজার তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারণার কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। এ বিভাগে অনুমোদিত ৭২টি পদের বিপরীতে বর্তমানে ১১জন কর্মকর্তা ও ৪০ জন কর্মচারী আন্তরিকতার সাথে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাজার মনিটরিং কার্যক্রমঃ

সদর দপ্তরে দৈনিক বাজারদর অবহিতকরণ ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ ছাড়াও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে কৃষকদের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তি ও ভোক্তা সাধারণের জন্য সুলভ মূল্য নিশ্চিতকরণ এবং বাজার সংযোগ এ অধিদপ্তরের প্রধান কাজ। কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিতকরণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ ভেজাল রোধ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার রোধে এ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ২২-২৩ অর্থ বছরে জেলা প্রশাসনের  সহযোগিতায় কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ৫০ টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় ৯৪১০০/- (চুরানব্বই হাজার একশত টাকা) জরিমানা করা হয়। এ আদালত পরিচালনার ফলে বিভিন্ন উৎসব ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়নসহ পণ্যের কৃত্তিম সংকট রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ বিভাগের ০৮টি জেলার প্রধান বাজারসমূহে ১০ টি করে মধ্যম সাইজের মূল্য তালিকা বোর্ড দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০ টি করে ছোট সাইজের মূল্য তালিকা বোর্ড বাজরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে । যার ফলে ক্রেতা সাধারণ মূল্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন এবং অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাজার কারবারীদের অযাচিত মূল্য  বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ী,কৃষক ও ভোক্তাদের অধিকার সচেতন করার জন্য বিভাগের আওতাধীন জেলাসমূহের বাজারে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৩০০০০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

এনসিডিপি পাবা বাজার কার্যক্রমঃ

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর আর্থিক সহায়তায় এনসিডিপি ও পাবা প্রকল্পের মাধ্যমে এ বিভাগে মোট ০৮টি পাইকারী, ৩২টি গ্রোয়ার্স মার্কেট ও ১ টি পাবা মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এসব বাজারসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণের মধ্যে একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা ও বাজার সংযোগ পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখিত মার্কেট হতে জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ খ্রি. পর্যন্ত সর্বমোট ৮,০৬৩,৯৬ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করা হয়েছে ।

 

কৃষক বাজারঃ‘‘জেলা পর্যায়ে কৃষকের বাজার স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ শাকসবজি বাজারজাতকরণ সম্প্রসারণ কর্মসূচী’’হতে (২০২১-২০২২) অর্থ বছরে বিভাগে ০৪ টি কৃষকের বাজার নির্মাণ করা হয়েছে। উল্লেখিত ০৪ টি বাজারের মাধ্যমে কৃষক সরাসরি তাঁদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার নিকট দর কষাকষির মাধ্যমে বিক্রির সুযোগ পাবে। রপ্তানীকারক ও ব্যবসায়ীদের সাথে লিংকেজ স্থাপনের মাধ্যমে পূর্বের ন্যায় অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হবে। ফলে চাষীরা উপকৃত হবেন।

বিপণন সেবার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহঃ

রংপুর অঞ্চলের বিখ্যাত হারিভাঙ্গা আমের সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও কৃষকের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এ বছর আম সংগ্রহকালীন সময়ের পূর্বেই জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, রংপুর কর্তৃক আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে মত বিনিময় করা হয়। সেই সাথে আম বাজারজাতকরণের তারিখ ২০-0৬-২৩ ইং নির্ধারণ করা হয়।নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই যেন অপরিপর্ক্ক আম বাজারজাত না করা হয় সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌড়াত্ম্য হ্রাস কল্পে এ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নগরীর মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকায় হাড়িভাঙ্গা আম বিপণন কার্যক্রম  সংক্রান্ত বিষয়ে অংশীজনের সাথে মত বিনিময় করা হয় । যা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক উন্নয়নকৃত ডিজিটাল মার্কেট প্লেস ‘‘সদাই’’এ্যাপে এ বিভাগের অনেক ‍উদ্যোক্তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে অত্র অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

শস্য গুদাম ঋণ কার্যক্রমঃ

কৃষকদের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মোট ৩৫ টি ‍গুদামের মাধ্যমে শস্য গুদাম ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যেখানে কৃষকগণ ফসল সংগ্রহ মৌসুমে তাঁদের পণ্য বিক্রয় না করে গুদামে সংরক্ষণ করেন এবং বাজার মূ্ল্যের ৭০% ব্যাংক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে কৃষকগণ তাঁদের পণ্য বিক্রয় করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পর আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ বিভাগের আওতাধীন ৩৫ টি গুদামে ২৫২৮ মেঃটন শস্য জমা করা হয় এবং জমাকৃত শস্যের বিপরীতে প্রায় ২.৩৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচীঃ

কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আলুর বহুমূখী ব্যবহার ,সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দিনব্যাপী গৃহ পর্যায়ে আলু সংরক্ষণ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ৬০ টি (১৮০০ জন  প্রশিক্ষণার্থী ),উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ১৫ টি (৪৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ), কুকিং ডেমোনেষ্টশন ১১২টি ও মাঠ দিবস 50টি আয়োজন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সর্ব মোট ১৪৪ টি আলুর অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মিত করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় হতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা (এনআইএস) বিষয়ক ২ টি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত প্রশিক্ষণে  ৮ টি জেলার(২৫+২৫)=৫০ জন  কর্মকর্তা/কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।

আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর,রংপুর বিভাগ,রংপুর কর্তৃক গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মোট ১২০ জন কৃষক,কৃষাণী,কৃষি ব্যবসায়ী,কৃষি উদ্যোক্তা,কৃষি পণ্যে প্রক্রিয়াজাতকারী,নারী উদ্যোক্তা ও রপ্তানি এজেন্টগণকে” উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যের আধুনিক বিপণন কৌশল”কৃষক,কৃষি ব্যবসায়ী ও রপ্তানি এজেন্টগণের রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের সংগ্রোহোত্তর ব্যবস্থাপণা,বিপণন কৌশল ও রপ্তানি সহায়ক”কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আধুনিক বিপণন কলাকৌশল” এবং টমেটোর আধুনিক বিপণন কলাকৌশল,সংরক্ষণ ও ভ্যালু চেইন”বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়,রংপুরে অবস্থিত প্রসেসিং সেন্টার হতে ৪০ জন কৃষি পণ্যে প্রক্রিয়াজাতকারীকে টমেটো,পেয়ারা,চাল ও কাঠাল প্রসেসিং সুবিধা প্রদান করা হয় ।

 আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এর কার্যালয় হতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (4IR),শস্য জমা ও আধুনিক বিপণন কলাকৌশল ও গুদাম পরিচালনায় দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক ৪ টি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রশিক্ষণে কৃষক,ব্যাবসায়ী, গুদাম রক্ষকসহ মোট (২৫+২৫+২৫+২৫)=১০০ জন অংশগ্রহণ করেন।  পঞ্চগড়,বোদা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে কৃষক ও কৃষি ব্যবসায়ীদের রপ্তানি সহায়ক ০ ১ টি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । রংপুর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কক্ষে ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থী একসাথে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। প্রশিক্ষণ কক্ষে ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ও সাউন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া পঞ্চগড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কক্ষে ২০-৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী  সুবিধাসহ একসাথে প্রশিক্ষণ নিতে পারে।

লাইসেন্স ইস্যু নবায়ন এবং প্রজ্ঞাপিত বাজার সংক্রান্ত তথ্যঃ

রংপুর বিভাগের আওতাধীন ৮টি জেলায় ৮২টি প্রজ্ঞাপিত বাজার রয়েছে। এ বিভাগের আওতাধীন জেলা অফিসসমূহ কৃষি পণ্যের পাইকারী বিক্রেতা, আড়তদার ও কমিশন এজেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কৃষি পণ্যের ব্যবসার লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ বিভাগের ০৮টি জেলা অফিস হতে মোট ১৫৫৭ টি নতুন ও নবায়ন লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। নতুন ও নবায়ন লাইসেন্স হতে মোট ১৪.৮/-লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে।

প্রচার বিজ্ঞাপনঃ কৃষক ,ব্যবসায়ি ও ভোক্তাগণের মাঝে কৃষি পন্য বিপণন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ ও কৃষি বিপণন বিধিমালা -২০২১ সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে অবহিত করণের জন্য বিভিন্ন পোস্টার,ক্যালেন্ডার,ফোল্ডার,লিফলেট এবং আইন ও বিধিমালা মুদ্রণ ও বাঁধাই করে প্রচার করা হয়।

শুদ্ধাচার কার্যক্রমঃ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের অধীনে নৈতিকতা কমিটি গঠন পূর্বক ৪ টি সভা ,সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিওে অংশীজনের সাথে (২) দুইটি সভা ,কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। উওম কর্মকর্তার স্বীকৃতিস্বরূপ(২) দুই জন কর্মকর্তা ও (১) একজন কর্মচারীকে সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে।

সিসিটিভি স্থাপনঃ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রংপুর বিভাগের উপপরিচালকের কার্যালয়, রংপুর জেলা কার্যালয়, আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ডরমেটরি (আবাসিক কক্ষ) সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে।

মেলায় অংশ গ্রহণঃ

এ বিভাগের ০৮টি জেলা অফিস হতে উন্নয়ন মেলা ও কৃষি মেলায় অংশ গ্রহণ করা হয়। মেলায় আলু সংরক্ষণের মডেল ঘর, শস্য গুদামের মডেল ঘর,কৃষি পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার ও অন্যান্য কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়,যা স্থানীয় জেলা প্রশাসনসহ সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছে। এ ছাড়াও অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম বিষয়ক ফোল্ডার, পোস্টার,লিফলেট, স্টিকার ও পুস্তিকা ইত্যাদি বিতরণ করা হয়।